প্রকাশ :
২৪খবরবিডি: 'জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন আইনের খসড়ায় 'ভোটার তালিকা' প্রসঙ্গটি থাকছে না। জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে ভোটার তালিকা প্রণয়নের বিষয়টি আইনের প্রাথমিক খসড়ায় রাখা হয়েছিল। সংবিধান অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রণয়নের একমাত্র এখতিয়ার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হওয়ায় সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের আইনে 'ভোটার তালিকা' প্রসঙ্গটি না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
যা আছে খসড়ায় :আইনের খসড়া অনুযায়ী, একজন নাগরিককে একটি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন নম্বর দেওয়া হবে। যেটা স্ব-স্ব নাগরিকের একক নিবন্ধন নম্বর হিসেবে সব জায়গায় ব্যবহার হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধকের পাঁচটি সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় 'নিবন্ধককে তথ্য-উপাত্ত, ইত্যাদি সরবরাহ ও সহায়তায় বাধ্যবাধকতা' শীর্ষক একটি ধারায় সব ধরনের প্রতিষ্ঠানকে তথ্য দিতে বাধ্য করার বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, 'নিবন্ধকের চাহিদা অনুযায়ী যে কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কমিশন বা সংস্থা উহাদের নিকট সংরক্ষিত তথ্য, কাগজপত্র, ইত্যাদি নিবন্ধককে দিতে এবং দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবে।' এ ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০১০-এর আওতায় জাতীয় পরিচয়পত্র-সংক্রান্ত সব তথ্য-উপাত্ত এবং এ-সংক্রান্ত অনলাইন তথ্যভান্ডার এই আইনের অধীনে নিয়োগ পাওয়া নিবন্ধকের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেও খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে জাতীয় পরিচয়পত্র-সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের দণ্ড হিসেবে সর্বোচ্চ সাত বছর এবং সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া অন্য কারও পরিচয়পত্র বহন, পরিচয়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে জ্ঞাতসারে মিথ্যা বা বিকৃত বা তথ্য গোপন করলে অনধিক সাত বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অর্থদণ্ডের কথাও আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কী পরিমাণ অর্থদণ্ড হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ অর্থদণ্ডের ক্ষেত্রে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হতে পারে।
আছে সংশয় :নির্বাচন কমিশন থেকে বর্তমান সরকারের আমলে এনআইডির দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন সংশ্নিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। তাই এ সরকারের বিদ্যমান মেয়াদে এনআইডির নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে যাওয়া কঠিন হবে। এনআইডির নিয়ন্ত্রণ নিতে সরকারের সিদ্ধান্তের পর এক বছরের বেশি সময় চলে গেলেও আইন প্রণয়ন হয়নি। সরকারের হাতে থাকা সোয়া বছরের মধ্যে আইন প্রণয়ন ও অধিদপ্তর গঠন করে এনআইডির মতো জটিল একটি কাজ বুঝে নেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।
এনআইডি আইনের খসড়া: থাকছে না 'ভোটার তালিকা'
তাঁরা বলছেন, আইন প্রণয়ন হলেই বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে না। এনআইডি ভোটার তালিকার বাই প্রোডাক্ট হিসেবে এসেছে। নির্বাচন কমিশন তাদের নিজস্ব জনবলের সঙ্গে প্রকল্পের আওতায় আরও কিছু জনবল নিয়ে কাজটি করছে। এক যুগের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতার পর এনআইডি নিয়ে বহু জটিলতাও রয়েছে। সরকার আইনের ভিত্তিতে অধিদপ্তর গঠন করলেই রাতারাতি দায়িত্ব হস্তান্তর সম্ভব হবে না। একদিকে অধিদপ্তরের বিপুল সংখ্যক জনবল কাঠামোর অনুমোদন নিতে হবে; সেইসঙ্গে কেন্দ্রীয় এবং মাঠ পর্যায়ে আলাদা অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এতে বহুপক্ষীয় জটিলতাও আছে।
-বাড়তি খরচের চাপ :নির্বাচন কমিশন সারাদেশে থাকা তাদের জনবল এনআইডি-সংক্রান্ত কাজে লাগাচ্ছে। এনআইডির দায়িত্ব সরকারের হাতে গেলে নতুন গঠন হতে যাওয়া অধিদপ্তরেরও একই ধরনের জনবল লাগবে। এ খরচ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যাবে, যা এই সময়ে করা সরকারের জন্য কঠিন হবে বলে মনে করেন সংশ্নিষ্টরা। নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ২৪খবরবিডিকে বলেন, আইনে শব্দগতভাবে যা-ই থাকুক, জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রমের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের একটি সংযোগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, 'অনেক জনবল লাগবে, খরচ তো বাড়বেই।' জটিলতা বাড়বে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে হেলালুদ্দীন বলেন, শুরুতে কিছু সমস্যা হতে পারে। আশা করি, পর্যায়ক্রমে সেটা ঠিক হয়ে যাবে।